Film Review: নগরকীর্তন (Nagarkirtan)

Untitled+195.jpg

এ ছবির গল্পে আছে অবর্ণনীয় প্রেম, যে প্রেম তথাকথিত। অনভিপ্রেত অথচ প্রকৃত প্রেম তো মৃত্যুহীন, সংজ্ঞাহীন।

এই ছবি পরিচালনা করেছেন কৌশিক গাঙ্গুলি।

মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী(মধু), ঋদ্ধি সেন(পরিমল/পুঁটি) এবং বিদীপ্তা চক্রবর্তী।

ঘটনা:

পরিমল একজন রূপান্তরকামী নারী। একদম কিশোর বয়সে সে প্রেমে পড়ে তার গৃহশিক্ষক সুভাষদা'র সাথে, তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়

তবে, সেই ভালোবাসা ছিলো একদিক থেকেই কারণ সুভাষ বিয়ে করে তার দিদি কে, এই ঘটনায় ভেঙে পড়ে পরিমল ও মনে মনে ঠিক করে নেয় যে এই দেশে দুই পুরুষের ভালোবাসা পরিণতি পাবে না, তাই তার নিজের দেহের সম্পূর্ণতা আনতে ও কোনো পুরুষকে ভালোবেসে সংসার করতে হলে তাকে তার জন্মগত লিঙ্গ পরিবর্তন করে দেহে নারী হয়ে উঠতে হবে।

এই সিদ্ধান্ত নেবার পরে পরিমল বাড়ি থেকে পালায় ও যোগ দেয় হিজরা'দের দলে।

পরিমল থেকে তার নতুন নাম হয় পুঁটি।

এরপর সে রাস্তায় বাকি হিজরা'দের সাথে সিগনালে দাঁড়িয়ে টাকা রোজগার করতে শুরু করে দেয় ও এই সময়েই আবার করে এক নতুন ভালোবাসা'র সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে একটি চাইনিজ রেস্তোরাঁ'র ডেলিভারি বয় মধু'র সাথে।

মধু তার কাজের অবসরে কীর্তন গায়, এবং পুঁটির সাথে সম্পর্কের পর স্বপ্ন দেখে দুজনে ঘর বাঁধার

সে পুঁটিকে আশ্বাস দেয় যে, দরকারে সে তার গ্রামের জমি বিক্রি করে হলেও পুঁটির লিঙ্গ পরিবর্তনের সব দায়িত্ব নেবে,

দুজনেই স্বপ্ন দেখে এক নতুন জীবনের, সেই আশায় তারা দেখা করতে যায় মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে।

মানবী একটি চৈতন্যদেবের মূর্তি দেয় পুঁটিকে।

উল্লেখ্য:

শ্রীচৈতন্যে'র মধ্যেও কিন্তু নারীপুরুষ উভয় সত্তাই বিদ্যমান।

এরপর,

মধু-পুঁটি রওনা দেয় মধু'র দেশের বাড়ি নবদ্বীপের উদ্দেশ্যে।

পথে তারা একটি হোটেলে ওঠে, সে খানে রাতের বেলায় ঘরে পুঁটি তার পরচুল খুলতে গেলে, মধু তাকে থামিয়ে বলে খুলতে হবে না, যেমন আছে তেমনটাই থাক

কারণ, সে সবসময় পুঁটিকে এক নারী হিসাবেই দেখতে চায় তার অবচেতনে খোঁজ চলে যে সঙ্গিনীর।

**********

এরপর মধু পুঁটিকে নিয়ে পৌঁছয় তার দেশের বাড়ি নবদ্বীপে।

মধুর পরিবার বৈষ্ণব কীর্তনীয়া পরিবার।

বৈষ্ণব রা নারীসুলভ পুরুষদের রাধাভাবে দেখলেও, নিজেদের বাড়ির ছেলে এমন এক রূপান্তরকামী নারীকে বিয়ে করবে বলে এনে ঘরে তুললে, পরিবারের লোকেরা পুঁটির প্রতি ন্যূনতম মানবিক না হয়ে তাকে যথাসম্ভব অপমান করে তাড়িয়ে দেয়।

কেউ বোঝেনা তাদের ভালোবাসার কথা।

শুধু, মধুর বৌদি তাদের কথা বুঝতে পারে ও মধু যখন পুঁটি কে খুঁজতে বেরোয় তার হাতে টাকা দেয়।

অপমানিত পুঁটি এবার ফেরার টাকা জোগাড় করতে, পথে হিজরাবেশে ভীক্ষা করে ও এলাকার হিজরাদের হাতে ভীষণ মার খায়, হিজরাদের নিয়ম অনুযায়ী এলাকা বহির্ভূত অন্য কোনো হিজরা টাকা তুললে তাদের অপমানিত করা হয়।

উল্লেখ্য: এখানেও সেই সামাজিক পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতায়নের বীভৎস রূপই ফুটে ওঠে।

পুঁটি কে তারা প্রকাশ্য রাস্তায় নগ্ন করে ঘোরায় ও পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

এরপর অপমানিত পুঁটি লক আপে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে ও মধু এসে দেখে তার ঝুলন্ত মরদেহ।

এই চরম দুর্ঘটনায় ক্ষতবিক্ষত হয় পুঁটিকে অসম্ভব ভালোবেসে থাকা মধুর হৃদয়।

সে বাড়ি ফেরে না, ফিরে যায় কলকাতায় পুঁটিদের সেই হিজরা ঘরে ও পুঁটির সাথে তার বিরহে যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়ে নিজেই নিজের সত্তা র রূপান্তর ঘটায় মধু।

**********

এই ছবিটি আমি আমার রূপান্তরকামী বন্ধুদের সাথে হলে দেখতে যাই।

এবং সিনেমাহলে উচ্চ ও নিম্নমধ্যবিত্ত দর্শকের উপস্থিতি বেশি চোখে পড়ে।

হলের অন্ধকারে তাদের ফিসফিসে আওয়াজে ব্যঙ্গাত্মক স্বরে কানে আসে: "হিজরাদের প্রেম... হাস্যকর!! "

ইত্যাদি...

অথচ, এই ছবিটি যেকোনো মানবিক মানুষ কে নি:স্ব করে দেয়, শূন্য করে দেয় তার ভেতর টা, মনের গভীরে পৌঁছে করা নাড়ে।

কারণ,

বিষয় ও শিল্পীদের অভিনয়

ঋত্বিক ও ঋদ্ধি তাদের অন্যতম সেরা কাজ করেছেন মধু ও পুঁটির ভালোবাসা কে জীবন্ত করে তুলতে

মধুর বৌদি রূপী বিদীপ্তা দুর্দান্ত,

একটি দৃশ্যে,

পুঁটির সামনে বৌদি যখন নারীসুলভ স্বাভাবিকতায় তার ব্লাউজ পরিবর্তন করে তখন পুঁটি মুগ্ধ হয়ে যায় আর মনে মনে ভাবে

এমন একটি নিটোল নারীদেহই পারে তার অন্তরের সব অপ্রাপ্তি পূর্ণ করতে এবং তার প্রেমিক মধু'কে পরিপূর্ণ স্ত্রী সুখ দিতে...

এই দৃশ্যটি যত সাবলীল, ততোটাই মর্মস্পর্শী অভিনয়ের গুণে।

**********

তাও একটি প্রশ্ন মনে বারবার এসে যায়:

পুঁটি চরিত্রে কেন কোনো রূপান্তরকামী নারী অভিনেত্রী'কে নেওয়া হল না?

আর, শুধু অভিনয়ের সূক্ষ্মতাই শিল্পী বাছাইয়ের মাপকাঠি হলে, এমনভাবে যেকোনো অ-রূপান্তরকামী চরিত্রে কেন রূপান্তরকামী শিল্পীদের দেখা যায় না বা নেওয়া হয় না কখনও?

কেন এই অদ্ভুত পক্ষপাতদুষ্ট একুশে আইন আজকের দিনেও কোণঠাসা করে রাখবে অজস্র রূপান্তরকামী গুণী শিল্পীদের?

তারা অভিনয়ের কাজ চাইতে গেলে তাদের আশ্বস্ত করা হয় এই বলে:

"তোমাদের মতো চরিত্র এলে ঠিক ডাকবো",

অথচ, যখন এমন একটি জাতীয়স্তরের পুরস্কারপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক মানের ছবি আসে যেখানে এক রূপান্তরকামী চরিত্রই মূল ভূমিকায়,

তখন তাদের ছুঁড়ে ফেলে কেন ঋদ্ধি কে দিয়ে করানো হয় এই চরিত্রটি?

মিডিয়ায় এত বড় বড় বক্তৃতা দিয়েও, আজকে এই সময়ে এত আইন পাশ হয়ে যাবার পরেও সমাজে রূপান্তরকামী রা সেই বঞ্চিত, অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে তারা আজও প্রতিনিয়ত গুণ থাকা সত্বেও তাদের প্রতি চূড়ান্ত অবহেলার শিকার হয়ে...

যদিও, ঋদ্ধি তার অভিনয়ে প্রায় নিখুঁত, পুঁটির আকুল আর্তি, প্রেম, নিদারূণ যন্ত্রণা একাত্ম হয়ে যায় তার অভিনয়গুণে

"বিশ্বাস করো, মধুদা: আমি ছেলে নই... আমি মেয়ে"

গেঁথে যায় মধুর অন্তরে, সে অনুভব করে তার পুঁটির প্রতি সেই অনন্ত ভালোবাসা যা নারীপুরুষের চিরাচরিত রূপ।

এই দৃশ্যের অনন্ত মাধুর্যে দর্শক আবেগঘন হয়ে পড়ে, ভিজে ওঠে সাধারণ দর্শকের চোখ।

ক্যামেরায় শীর্ষ রায়, সম্পাদনায় শুভজিৎ সিনহা ও সঙ্গীত পরিচালনায় প্রবুদ্ধ ব্যানার্জী তাদের মুন্সিয়ানার চিহ্ন রেখে যান।

মনে পড়ে যায় একটি ভীষণ সুন্দর দৃশ্য:

যেখানে, মধু প্রথম পুঁটিকে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত শরীরে দেখে, প্রথমবার স্পর্শ করে তার শরীর

লিঙ্গ-যৌনতা'র উর্ধ্বে উঠে নিখাদ প্রেমের ধারায় মিশে যায় দুটো শরীর।

এস্রাজ ও পিয়ানো অ্যাকোর্ডিয়নে'র সুরে দৃশ্যটি পৌঁছে যায় চিরন্তন ভালোবাসা'র এক নৈসর্গিক মাত্রায়...

আসলে,

নগরকীর্তন একটি রূপান্তরকামী ও পুরুষে'র নিটোল প্রেমের গল্প

যেখানে, তাদের সুখ-দু:খ, আনন্দ-যন্ত্রণা, হাসি কান্না, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি আর মিলন-বিচ্ছেদের জীবন্ত ছবি ভেসে ওঠে,

আর হৃদয়ে নাড়া দেয়, চোখ ঝাপসা করে উপচে পড়ে, লিখতে গিয়ে কলম থেমে যায় আমাদের...

Initially when Nagar Kirtan was released in 2017, it released with glowing reviews both from audiences and critics alike. Film critics hailed Riddhi Sen’s performance as ‘path breaking’ and nuanced. I had watched the trailers and was excited to watch it, to see my identity being represented on screen. This was not the first time that a trans person’s experience was brought to life in Bengali cinema. The inimitable Rituporno Ghosh had made two very beautiful and sensitive films which were autobiographical and highlighted her journey as a transwoman.

I went to watch Nagar Kirtan on a cold winter morning with my friends from the community at a local movie theatre. Before the film even began, muffled whispers rose from the darkness of the hall, deriding voices saying"The love of Hijras... how ridiculous’

Nagarkirtan tells us the transformative and spiritual love story of Puti and Madhu. The early scenes of Puti growing up as a transwoman was very relatable. The bullying, the discovery of one’s own identity and eventually falling in love, all resonated with me and was very sensitively portrayed.

As a teenager, Puti falls in love with her tutor, Subhas,which only leads to heartbreak for Puti, when he ends up marrying her sister instead. This incident leaves Puti cynical about finding love as a transwoman in this country. To escape the grim realities of her situation, she runs away from home and joins a Hijra gharana. This is where she sheds off her deadname and finds herself in the name ‘Puti’. She starts working at traffic signals giving blessings in exchange of money, an age old Hijra tradition. Around this time, love finds her again in the form of Madhu, a delivery boy, working for a Chinese restaurant. Madhu is a Vaishnavite and sings kirtan for Puti and they start dreaming of having their own home. Madhu even assures Putti that he is ready to sell his land, to pay for gender reassignment surgery for Puti.

Both of them dream of a new life, and go to meet Manobi Bandyopadhyay, a renowned trans activist and educator with a hope to start something sustainable. Manabi gifts an idol of Chaitanyadev to Puti. Chaitanyadev and Vaishnavism serves as a metaphor for gender fluidity throughout the film. It is notable in this context that, both the essence of male and female is manifested In the corporeal existence of Chaitanyadev.

Madhu and puti set off together to visit Madhu's country home Nabadwip. The intimacy between Puti and Madhu has been sensitively portrayed although there is a certain cis heterosexual gaze in the manner in which the camera looks at Puti.

Although Vaishnavism perceives a feminine man as incarnation of Radha, but when the male heir of the family is seen reciprocating his love for a transwoman, the family members are unwilling to see their love. The constant humiliation and insults drive Puti away from Madhu. She leaves and rejoins her Hijra gharana and starts working on the streets. In a particularly harrowing scene, she is paraded naked through the steets by other Hijras. I found this sequence unnecessary and falling into harmful stereotypes about Hijras who are already such a marginalized section of the society. There is always this toxic curiosity around a trans person’s body and in this particular scene, the film succumbs to it.

Puti is arrested by the police and she succumbs to her pain and dies by suicide. Madhu, unable to cope with her death, finds solace in Puti’s Hijra quarters and the film closes with Madhu donning a feminine attire.

The ending is open to various interpretations. Some of my friends thought it was Madhu transforming into Puti after her death, to be able to be closer to her. I personally felt it was an interesting ending as it shows gender without a binary, as a transformative and fluid space.

The performances are believable, emotional and sensitively portrayed by the lead actors. The thing that kept bothering me throughout the course of the film was representation. Why did they cast a cis heterosexual man as a transwoman, when there are many talented transwomen actors who constantly struggle to find work. Casting cis men as transwomen sends out a harmful message to the general public. It tells people that transwomen are not ‘real’ women.

Another glaring issue I personally had was with the ending. Although it is revolutionary to show a trans person being in love on screen, the film ultimately shares the age old notion that such romances are eventually doomed to fail. Also, as a trans person, I am tired of the trauma porn around trans lives. I personally want to see more stories of us thriving despite the pain we go through in our lives.

Overall this film was relatable and an emotional experience for me, despite its flaws.

The film is ultimately a love story,which brings to life their vivid life of joy and sorrow, mirth and melancholy, smiles and tears, unison and separation,

The heart is wrested, vision fades and the eyes overflow, the pen stops writing...

Written by Anurag Maitreyee
Translated by Kallol Guha

Samabhabona